ওজন বাড়ানোর উপায়
অনেকেই আছেন অনেক খেয়ে এবং ব্যায়াম করেও ওজন বাড়াতে পারেন না। কিভাবে ওজন বাড়াবেন, মো.মনিরুজ্জামানকে জানালেন ফিটনেস প্রশিক্ষক জহুরুল ইসলাম এবং পুষ্টিবিদ তৃপ্তি চৌধুরীযাঁরা অনেক খাওয়ার পরও ওজন বাড়াতে পারেন না, তাঁদের হার্ডগেইনার বলে। হজমশক্তি সবার এক না। এটা জন্মগত। যাঁদের হজমশক্তি খুব বেশি, খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের ক্যালরি বার্ন হয়ে যায়, পুষ্টি গায়ে লাগে না। আবার যাঁরা একটু খেলেই মোটা হয়ে যান, তাঁদের হজমশক্তি খুব কম। খুব কম বা বেশি দুটোই খারাপ, ভালো হলো মাঝামাঝি থাকা।
* জমশক্তি ভালো করার উপায় কী?
আমাদের শরীর ঘণ্টায় নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি বার্ন করে। সাধারণত কিছু না করা অবস্থায় ঘণ্টায় ৭৫ ক্যালরি বার্ন হয়। একজন সুস্থ ও পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে ১৮০০ ক্যালরি পরিমাণ খাবার প্রয়োজন। শরীর নির্দিষ্ট সময় (তিন ঘণ্টার কিছু কম সময়) পর্যন্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করতে পারে। বেশি হলে শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাকি ক্যালরিগুলো ফ্যাট হিসেবে শরীরে জমা করে রাখবে।
কারণ একবার খেলে সেটা হজম হতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লাগে। ঘুম ছাড়া বাকি সময় আমাদের সারা দিনের ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে।
প্রতি আড়াই বা তিন ঘণ্টা করে ছয়বারে ৩০০ ক্যালরি করে খেলে ১৮০০ ক্যালরি পূর্ণ হয়।
৩০০ ক্যালরি খাবার তিন ঘণ্টায় হজম হয়ে গেলে তিন ঘণ্টা পর সুস্থ ও স্বাভাবিক শরীর আবার নতুন খাবারের অপেক্ষায় থাকবে।
যা করবেন
* না খেলে প্রথমে শরীরে সঞ্চিত চর্বি বার্ন করে শক্তি জোগাবে। ধীরে ধীরে পেশি বার্ন শুরু করবে। এভাবে শরীর ক্ষয় হবে এবং মানুষ আস্তে আস্তে রোগা হবে।
* আপনি তিন ঘণ্টায় ৩০০-র বদলে ৩০০+ ক্যালরি গ্রহণ করেন, তাহলে আপনার শরীর তিন ঘণ্টায় ৩০০ ক্যালরি বার্ন করে শরীরের শক্তি জোগাবে। বাকি ক্যালরি সোজা ফ্যাট হিসেবে জমা হতে শুরু করবে।
* যদি তিনবার খান, তাহলে গড়ে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর পর ৬০০ ক্যালরি করে খেতে হবে। তিন ঘণ্টায় ৩০০ ক্যালরি ঠিকমতো হজম হবে, বাকি খাবার ঠিকমতো হজম না হয়ে ফ্যাট হতে শুরু করবে এবং এই পরের তিন ঘণ্টা শরীর দুর্বল লাগতে শুরু করবে।
* শরীর যখন দেখবে আপনি তিন ঘণ্টা পর আবার খাবার দিচ্ছেন না, তখন সে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করবে এবং সেটা ফ্যাট হিসেবে।
* খাওয়া হজম হওয়া মাত্রই তিন ঘণ্টা পর পর খাবার খান, তাহলে শরীরের আর বাড়তি কষ্ট করে অভ্যন্তরীণ শক্তি সঞ্চয় করতে হবে না; অর্থাৎ ফ্যাট জমাবে না। অর্থাৎ হজমশক্তি ভালো রাখতে নিয়মিত অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে।
কী কী খাবেন?
ব্যালান্সড খাবার খাবেন। প্রতি বেলায় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের সমন্বয় থাকতে হবে। মোটামুটি ৪০ শতাংশ প্রোটিন, ৩০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ৩০ শতাংশ ফ্যাট হতে হবে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, টক দই, লাল চালের ভাত, আটার রুটি, শাকসবজি, ফলমূল, প্রচুর পানি পান করুন। প্রথম দুই সপ্তাহে কমপক্ষে ২৫০০ ক্যালরি খাবেন। মেপে খেতে হবে না। প্রোটিন যেন যথেষ্ট হয়। প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর কিছু না কিছু খাবেন। সেই সঙ্গে প্রচুর পানি।
কী কী খাবেন না?
সাদা ভাত, গোল আলু, ময়দা, চিনি, সোডিয়াম, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, নিকোটিন, প্রসেসড ফুড, ক্যান ফুড, তৈলাক্ত ও মসলাজাতীয় খাবার।
কী ধরনের ব্যায়াম করবেন?
জিমে গিয়ে খুব হার্ড ব্যায়াম করতে হবে। ওয়েট বেশি, কৌশলগত দিক কম। সপ্তাহে তিন দিন (এক দিন পর পর) ব্যায়াম করবেন। প্রতিটা সেশন ৬০ থেকে ৭৫ মিনিটের মধ্যে রাখবেন। এমন সব ব্যায়াম করতে হবে, সেসব ব্যায়ামে একই সঙ্গে একাধিক পেশিতে চাপ পড়ে। এগুলোকে ‘কোর’ বা ‘কম্পাউন্ড’ ব্যায়াম বলে। কেননা এরপর শরীর ক্লান্ত হবে। তখন ব্যায়াম চালিয়ে গেলে পেশি ক্ষয় হবে। জিম শুরুর দুই ঘণ্টা আগে খাবেন এবং শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই আবার খাবেন। যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেবেন।
ঘুম কেন জরুরি?
প্রতিদিন ৮-৯ ঘণ্টা ঘুমান। মানুষ ঘুমের মধ্যেই বাড়ে।